গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে সংস্থাটির চলমান বার্ষিক সভার পাশাপাশি সংস্থাটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজারের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। একই দিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা এবং ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গেও বৈঠক করেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা।
গতকাল তৃতীয় দিনের বৈঠক শেষে চলমান সম্মেলনে বাংলাদেশের কার্যক্রমের অগ্রগতির বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশেষ শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) পেতে আরো অপেক্ষা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। শ্রম অধিকারসহ আরো কিছু ইস্যুতে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় যুক্তরাষ্ট্র। এসব বিষয়ে তারা আরো অগ্রগতি দেখতে চায়।
আমরা বলেছি, এসব খাতে আমরা ধাপে ধাপে উন্নতি করছি। শ্রম ও জনশক্তির জায়গায় আরো কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা করতেও আশ্বস্ত করেছে দেশটি।
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে সাইড লাইনে বিভিন্ন দেশ এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করছেন অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর। উন্নয়ন সহযোগীরা আমাদের সব ধরনের সংস্কার কার্যক্রমে সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সুফল পেতে আরো কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। এখানে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকও কাজ করছে। তাদের দেওয়া পরামর্শগুলো কাজে লাগানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন : সুইজারল্যান্ড থেকে আমদানি হচ্ছে দুই কার্গো এলএনজি
এদিকে বকেয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। রিজার্ভ থেকে এক পয়সাও না নিয়ে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার ঋণের কিস্তি শোধ করার ফলে ডলার নিয়ে অস্থিরতাও কমে আসছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতিও কমে আসবে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে যেই জিতুক বাংলাদেশ বিষয়ে তাঁদের নীতি অপরিবর্তিতই থাকবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর। ডলার সংকট কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে দেশের অর্থনীতি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের দায় পরিশোধ করছে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নয়ছয় সুদের আড়ালে বহু টাকা চলে গেছে ব্যাংক থেকে। এ জন্য ব্যাংক খাতকে ঠিকঠাক করতে সময় লাগছে। ওটা ছিল একটা ভুল সিদ্ধান্ত। বাজেট কাটছাঁট করা হবে, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বাংলাদেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেটা সহনীয় হতে দু-এক মাস নয়, কয়েক মাস সময় লাগবে। তবে আর নতুন করে টাকা ছাপানো হবে না। আগে টাকা ছাপিয়ে মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির কথা বলতে গিয়ে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘শেয়ারবাজারে নতুন বড় কম্পানি আসবে। এখানে অনিয়ম হয়েছে, আমরা সেগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করছি। অহেতুক ফ্লোর প্রাইস যেন না বাড়ে, সেটা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সবচেয়ে দুর্বল কম্পানি হিসেবে জেড ক্যাটাগরিতে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। আমরা সেটা বন্ধ করছি। বিশ্বব্যাংক বলেছে, এবার বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে, কিন্তু আমরা মনে করি সেটা একেবারে তলানিতে যাবে না। আবার শুধু শুধু প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দেখানো হবে না।’