গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯/০৮/২৪) বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলনকক্ষে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ নীতিমালা ঘোষণা করেন। এ সময় বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।
এবারের নীতিমালায় ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য কৃষি উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে ইসলামিক ব্যাংকিং পদ্ধতি তথা বা ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক বিনিয়োগপদ্ধতি সংযোজন করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রাণিসম্পদ খাতে ১ লাখ টাকা এবং পল্লিঋণে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে ডিপি নোট (১০ টাকা থেকে ৫০ টাকার স্ট্যাম্প/সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক), লেটার অব হাইপোথিকেশন (স্ট্যাম্প প্রয়োজন নেই), লেটার অব গ্যারান্টি ব্যক্তিগত (স্ট্যাম্প প্রয়োজন নেই) ছাড়া আর কোনো মাশুল গ্রহণ না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রা এবং বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর নিট ঋণ ও অগ্রিমের প্রায় আড়াই শতাংশ হারে হিসাবায়ন করে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ১২ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিকগুলো ২৫ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করবে।
ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব নেটওয়ার্ক (শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং, দলবদ্ধ ঋণ বিতরণ) এবং ব্যাংক-এমএফআই লিংকেজ ব্যবহার করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৫০ শতাংশের কম হতে পারবে না। এবার মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬০ শতাংশ শস্য ও ফসল, ১৩ শতাংশ মৎস্য এবং ১৫ শতাংশ প্রাণিসম্পদ খাতে বিতরণ করতে হবে।
এদিকে ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার অনর্জিত অংশ কৃষি খাতেই বিনিয়োগের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অ্যাগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট কমন ফান্ড (বিবিএডিসিএফ) নামে একটি তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ ব্যাংকগুলোর অনর্জিত অংশ এ তহবিলে জমা করতে হবে। এই জমাকৃত অর্থের বিপরীতে তাদের ২ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হবে। তহবিলে জমাকৃত অর্থ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে কৃষিঋণ নীতিমালার আওতায় গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করা হবে।
জানা গেছে, গত অর্থবছরে নির্ধারিত ৩৫ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ব্যাংকগুলো ৩৭ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। আগের অর্থবছরে বিতরণ করা হয়েছিল ৩২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বিদ্যমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ দেশে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি এবং টেকসই অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কৃষি খাতে যথাসময়ে পর্যাপ্ত অর্থের জোগান একান্ত প্রয়োজন। দেশের কৃষিপণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তা ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধিতে ও সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা ও টেকসই উন্নয়নে এ নীতিমালা কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।