newsinbiz.com

পাহাড়ের কৃষি হিসেবে আখ চাষের গুরুত্ব বাড়ছে।

পাহাড়ের কৃষি হিসেবে আখ চাষের গুরুত্ব বাড়ছে।

পাহাড়ের কৃষি হিসেবে আখ চাষের গুরুত্ব বাড়ছে।

ক্ষতিকর তামাক চাষের পরিবর্তে আখ চাষে ঝুঁকছেন বান্দরবানের কৃষকরা। বান্দরবনের পাহড়ি অঞ্চলে আগে যেখানে তামাকের চাষ হতো এখন হচ্ছে আখ চাষ। স্বল্প মূলধন ও কম পরিশ্রমে অধিক ফলন হওয়ায় সফলতার মুখ দেখছেন প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিরা।

কৃষিবান্ধব হিসেবে পাহাড়ের প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে পৌঁছে গেছে বিভিন্ন উন্নত মানের যন্ত্রপাতি। কিন্তু তামাকের আগ্রাসন থাকার কারণে পার্বত্যাঞ্চলে স্বল্প পরিসরে আখ চাষ হতো। অধিকাংশ চাষি তামাক চাষ করতেন। এতে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যে দেখা দিত নানা সমস্যা। পাহাড়ে উৎপাদিত আখের গুণগতমান ভালো ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় বাজারে চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক।

পাহাড়ে আগে তামাক চাষ করলে খরচ বেশি হতো কিন্তু সেই তুলনায় তেমন লাভ হতো না। কিন্তু বর্তমানে আখ চাষের ফলে স্বল্প ব্যয়ে লাভ হচ্ছে দ্বিগুণ। তা ছাড়া প্রতি ৪০ শতক জায়গায় প্রায় ১১ থেকে ১৫ হাজার টাকার আখ উৎপাদন হয়। এ ছাড়া আখ একবার রোপণ করলে তিন বছর ফলন পাওয়া যায়। আখ চাষের পাশাপাশি সাথি ফসল হিসেবে ভুট্টা, খিরা, মিষ্টি কুমড়া, আলুসহ নানা ফসল চাষ করা যায়। এতে সাথি ফসল থেকেও লাভ করে থাকেন তারা।

আরো পড়ুন- ‘স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট বাংলাদেশ-শিল্প মন্ত্রণালয়ের করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালা

এক সময়ে রোয়াংছড়ি, লামা, আলীকদম, বান্দরবানের রুমা, জামছড়ি, সদরসহ বিভিন্ন সমতল জায়গায় চাষ হচ্ছে ইক্ষু। এক সময় যেসব জমিতে তামাক চাষ হতো সেই জমিতেই এখন আখ চাষে ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টায় নামছেন পাহাড়ের কৃষকরা। শুধু আখ চাষেই নয় সেই আখ থেকে গুড়ও তৈরি করছেন অনেক কৃষক।

জেলায় সিও-২০৮, রং বিলাস-৪১, ৪২, ৪৩ বিএসআরআই, অমৃতসহ নানা জাতের আখ চাষ হচ্ছে। এতে একদিকে বাড়ছে আবাদি জমির পরিমাণ, অন্যদিকে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাচ্ছে কৃষকরা। প্রতিটি আখ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। তাই স্বল্প মূলধন ও কম পরিশ্রমে অধিক ফলন হওয়ায় সফলতার মুখ দেখছেন প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিরা।

সাধারণত দুই মেয়াদে আখ রোপণ করা হয়। প্রথমবার রোপণ করা হয় সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এবং দ্বিতীয়বার ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহে। আখ কাটা হয় সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে। অনেক কৃষক আবার ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এই তিন মাসের যেকোনো সময় আখ কাটেন। আখের ফলন পেতে ১০ থেকে ১২ মাস সময় লাগে। আখ পরিপূর্ণ বয়স হলে ১৫ থেকে ২০ ফুট লম্বা হয়।

আরো পড়ুন-পাট ও চামড়াজাতসহ রপ্তানিযোগ্য পণ্যের নতুন বাজার খোঁজার নির্দেশ বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর

বাংলাদেশ সুগারক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে জেলায় ২ টন আখ উৎপাদিত হয়েছে। চলতি বছরে ৩ দশমিক ৩৫ টন উৎপাদনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বান্দরবানে ৩০-৩৫ টন আখের চাহিদা রয়েছে।

পাহাড়ে আখ চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০০৬ সালে থেকে বান্দরবানে কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট।

হানসামা এলাকায় কথা হয় আখ থুই হ্লাসে মারমার সঙ্গে। তিনি জানান, আগে তামাক চাষ করতেন। বর্তমানে তামাক চাষ ছেড়ে আখ চাষ করছেন। আখ চাষে দুই থেকে তিন লাখ টকা লাভ করছেন।

বাংলাদেশ সুগারক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অসীম চক্রবর্তী বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে মধুমালা, ৪১ অমৃত, বিএমসিআর ৩৭, ৩৮ এই কয়েকটি জাত চিহ্নিত করতে পেরেছি। যদি প্রান্তিক পর্যায়ে উপজেলাগুলোতে পৌঁছতে পারি তাহলে আমরা আশাবাদী, তিন পার্বত্য জেলায় তামাকের বিকল্প হিসেবে চাষিরা আখ চাষে আরও আগ্রহী হবেন। তা ছাড়া তিন পার্বত্য জেলায় আখ চাষ বাড়ানোর জন্য যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে সেটি কৃষকদের জন্য লাভবান হবে। তামাকের বিকল্প হিসেবে আখ ও সাথি ফসল চাষ সম্প্রসারণের প্রচেষ্টায় আছি। আশা করি, আখ চাষ আগামীতে আরও বৃদ্ধি পাবে।’

Exit mobile version