newsinbiz.com

পাট দিয়ে নানা ধরনের হস্তশিল্পের পণ্য মনজুরুলের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয়।

৭০ হাজার টাকায় শুরু করা মনজুরুলের এখন কোটি টাকার ওপরে মূলধন।

পাট দিয়ে নানা ধরনের হস্তশিল্পের পণ্য মনজুরুলের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয়।

৭০ হাজার টাকায় শুরু করা মনজুরুলের এখন কোটি টাকার ওপরে মূলধন।

মনজুরুল ইসলাম দিনাজপুরের একটি জুট মিলে মেকানিক্যাল সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন।অভাবের সংসার। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই ঘর ছাড়েন ,কিশোর বয়সেই হাতে তুলে নেন লোহার হাতল। এরপর তিন বছরের জমানো টাকা দিয়ে একটি ইজিবাইক কিনে ভাড়া দেন; কিন্তু সেখানে আয় তো দূরের কথা, গুনতে হয় লোকসান। তারপরও তিনি হাল ছাড়েননি।

মনজুরুলের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বালাচওড়া গ্রামে ।মনজুরুল ২০১৬ সালে বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে হরিপুর গ্রামে বিয়ে করেন। আর এই বিয়েই তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয়।

আরো পড়ুন- অর্গানিক পণ্যের উদ্যোক্তা তামান্না শারমিন নাদিয়া, মেয়েকে ভেজাল মুক্ত খাবারের নিশ্চয়তা দিতেই তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা।

শ্বশুরবাড়িতে থাকাকালে তিনি দেখতেন, তাঁর শাশুড়ি মনছুরা বেগম পাট দিয়ে নানা ধরনের হস্তশিল্পের পণ্য তৈরি করেন । ‘কেয়ার’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে এ কাজ শিখেছিলেন তিনি। তাঁর কাজ দেখে একসময় মনজুরুলের মাথায় আসে এসব পণ্য বাজারজাতের চিন্তা। শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলে তাঁর তৈরি জিনিসপত্র বাজারজাত শুরু করেন মনজুরুল। পাশাপাশি বছর দুই শ্বশুরালয়ে থেকে শাশুড়ির কাছ থেকে হস্তশিল্পের কাজও শেখেন। পরে নিজের বাড়িতে ফিরে গ্রামের নারীদের প্রশিক্ষণ দেন তিনি। ২০১৮ সালে বালাচওড়া বাজারের পাশে শাশুড়ির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ‘মনছুরা জুট হ্যান্ডিক্রাফট’ নামে কারখানা চালু করেন তিনি। ফেসবুকে মনছুরা জুট হ্যান্ডিক্রাফট নামে মনজুরুলের একটি পেজ আছে। ২৫টি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার নারী তাঁর সঙ্গে কাজ করেন। শুধু কারখানাতেই কাজ করছেন ৭০ জন।

আরো পড়ুন- উদ্যোক্তার সফলতা: কুশিকাটার গহনা।

প্রথম মাসেই উৎপাদিত হয় তিন লাখ টাকার পণ্য।

ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে তিনি বিক্রি শুরু করেন। সেখান থেকেই তাঁর পণ্যের কথা জানতে পারেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। তাঁদের কাছ থেকে আবার জানতে পারেন ঢাকার ব্যবসায়ীরা।

নানা ধরনের বাস্কেট, ম্যাট, শিকা, ব্যাগসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করছেন তাঁরা। ক্রেতারা ডিজাইন পাঠিয়ে পণ্য তৈরি করিয়ে নিয়ে যান। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছেন। চীন, তুরস্ক, জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে তাঁর পণ্য। সরাসরি কারখানায়ও আসছেন অনেক ক্রেতা।

মনজুরুলের কাছ থেকে পণ্য কিনে ডেনমার্কে পাঠান ঢাকার ব্যবসায়ী তাওহিদ ইসলাম।

তিনি বলেন, বহির্বিশ্বে পাটপণ্যের ব্যাপক চাহিদা। ক্রেতাদের পাঠানো নমুনা মনজুরুলকে পাঠিয়ে তাঁরা কাজের ফরমাশ দেন। নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য তৈরি করে মনজুরুল পাঠিয়ে দেন। তিনি পরে সেগুলো বিদেশে রপ্তানি করেন।

শ্রমিক, কারখানা, কাঁচামাল, পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে তাঁর আয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। মনজুরুল বলেন, আল্লাহর রহমতে মূলধন কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। মনজুরুলের কারখানায় মাসে গড়ে ৬০ লাখ টাকার পণ্য উৎপাদিত হয়।

মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মাত্র ৭০ হাজার টাকা মূলধন আর ১৫০ নারীকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন।আর এখন পাটের তৈরি পণ্য বিক্রি করে মাসে তাঁর আয় দুই লক্ষাধিক টাকা। আশপাশের ২৫ গ্রামের দেড় হাজারের বেশি নারী হস্তশিল্পের কাজ করে অভাবের সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরিয়েছেন।

কারখানার ব্যবস্থাপক মোহনচন্দ্র দাস বলেন, পণ্যের চাহিদা বাড়ায় ৪০টি জিগ জ্যাগ সেলাই মেশিন ও ১১০টি ডস্টিং মেশিন দিয়ে এখন কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে তিনটি মেশিন কিনে দিয়েছেন তুরস্কের এক ক্রেতা। কারখানা ও বাইরে মিলে প্রায় দুই হাজার নারী-পুরুষ কাজ করছেন তাঁদের সঙ্গে।

হাজীপাড়া গ্রামের রেহেনা বেগম বলেন, ‘রান্নাবান্নার কাজ শেষে আগে অলস সময় কাটত। মনজুরুল প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাদের কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন। আশপাশের গ্রামের অনেক নারীই মনজুরুলের সঙ্গে কাজ করেন। আশপাশের গ্রামের অনেক নারীই মনজুরুলের সঙ্গে কাজ করেন।

বালাচওড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির উঠানে, রাস্তার পাশে গাছের ছায়ায় বসে পাট দিয়ে বেণি, শিকাসহ হরেক রকমের পণ্য তৈরি করছেন নারীরা। বাজারে মনজুরুলের খোঁজ করতেই কয়েকজন দক্ষিণ দিকের পথ দেখিয়ে দিলেন। ২০ মিটার হাঁটলেই মনছুরা জুট হ্যান্ডিক্রাফট। কারখানায় নারী-পুরুষ সমানতালে কাজে ব্যস্ত। পাট দিয়ে তৈরি পণ্যগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলেন মনজুরুল।

১৫ লাখ টাকায় ১১ শতাংশ জমি কিনে কারখানা গড়ে তুলেছেন। আয় থেকে আবাদি জমি, গাড়ি ও বাড়ি করেছেন। দিয়েছেন গরুর খামার। এখন স্ত্রী জান্নাতি আক্তার ও দুই ছেলেসহ তাঁর ৯ সদস্যের সুখের সংসার।

Exit mobile version